গলির ক্রিকেট থেকে বিশ্বকাপের হিরো

আইসিসি টি-২০ বিশ্বকাপের এবারের আসরে পাকিস্তানের সবচেয়ে কার্যকরী পেসারের নাম আসলে অনেকেই হয়তো শাহিন শাহ আফ্রিদির কথা বলবেন। কিন্তু পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যাবে এবার দলটির সেরা বোলার হারিস রউফ! 


যার উঠে আসার গল্পটা যেন একটা রোলার কোস্টার রাইডের মতো! মাত্র তিন বছর আগেও গলির ক্রিকেট খেলতেন রউফ। আসল ক্রিকেট বল তখনো হাতে তুলে দেখেননি তিনি। রউফের উত্থানটা মূলত পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) মাধ্যমে। লাহোর কালান্দার্সের হয়ে মূল ধারার ক্রিকেটে তার অভিষেক হয়। রউফের কালান্দার্সে সুযোগ পাওয়ার গল্পটা অনেকটাই রূপকথার গল্পের মতো। স্থানীয় একটি টুর্নামেন্টে টেপ টেনিসে বোলিং করছিলেন হারিস। সেখানেই তাকে দেখে পছন্দ করেন সাবেক পাকিস্তানি পেসার আকিব জাভেদের। 

আকিব তখন কালান্দার্সের কোচ। রউফকে ক্লাবে নিয়ে আসেন তিনি। কালান্দার্স সে বছর অস্ট্রেলিয়ায় প্রাক মৌসুম খেলতে যায়। প্রতিপক্ষ ছিল সিডনি থান্ডার্স। রউফকে দেখিয়ে থান্ডার্সের ম্যানেজার নিক কামিন্সকে কালান্দার্স কোচ আকিব বলেন, ‘কালান্দার্সে যোগ দেওয়ার আগে ও কখনোই ক্রিকেট বলে বল করেনি।

আকিবের এমন কথায় কামিন্স বিস্মিত হয়ে যান। মাঠে নেমে শেন ওয়াটসন ও মাইক হাসির মতো প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড়দের উইকেট তুলে নেন রউফ। এরপর থেকেই শুরু হয় তার উত্থান। ধীরে ধীরে চেনান নিজের জাত। সে বছরই অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় স্তরের ক্রিকেট খেলতে যান রউফ। নিউ সাউথ ওয়েলসের বিদেশি কোটায় তখন খেলতেন নেড ইকারস্লেই।

 কিন্তু লেস্টারশায়ারের হয়ে খেলার সুযোগ পাওয়ায় যাননি অস্ট্রেলিয়ায়। তখন রউফকে সে দলে নিয়ে আসেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পেসার ও নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রধান নির্বাহী ডেভিড গিলবার্ট। আর প্রথম বছরেই দলটির হয়ে দারুণ পারফরম্যান্সে নজর কাড়েন রউফ। 

গতির ঝড়ে রউফের আগ্রাসনের কথা তুলে ধরে দ্য হেরাল্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গিলবার্ট বলেন, ‘আমরা তাকে দ্বিতীয় স্তরে খেলাই কারণ বিদেশি খেলোয়াড়ের কোটায় আমাদের নেড ইকারস্লেই তখন লেস্টারের হয়ে খেলছিল। আমরা ভয় পেয়েছিলাম ‘হ্যারি’ কাউকে না আবার মেরে ফেলে। সে ছয়টি উইকেট তুলে নেয় এবং পরে আমরা তাকে প্রথম স্তরে নিয়ে আসি।

 এক বছরের মধ্যেই নিজের পারফরম্যান্সের ঝলক দেখিয়ে বিগব্যাশে জায়গা করে নেন রউফ। পরের বছর খেলেন মেলবোর্ন স্টার্সের হয়ে। সে ধারায় পরবর্তীতে জায়গা করে নেন পাকিস্তান জাতীয় দলে। চলতি আসরে এখন পর্যন্ত প্রতি ম্যাচেই উইকেট শিকার করেছেন রউফ। এখন পর্যন্ত মোট ৮টি উইকেট নিয়েছেন তিনি। যা পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ। ৭টি উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছেন শাহিন। গড়ের দিক থেকে পাকিস্তানিদের মধ্যে রউফ আছেন শীর্ষে। মাত্র ২০ গড়ে উইকেটগুলো নিয়েছেন তিনি। ফাইনালে ওঠার স্বপ্নে রউফ যে পাকিস্তানের বড় অস্ত্র, এ কথা বলাই যায়।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Recent in Sports